মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:২৬ অপরাহ্ন
সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি : মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার সিংগাইর-মানিকনগর ৯ কিলোমিটার জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটির সংস্কার কাজ প্রায় দেড় বছর হলেও শেষ হয়নি। রাস্তাটির সংস্কার কাজ বন্ধ থাকায় উপজেলার সায়েস্তা ও চান্দহর ইউনিয়নের সম্পূর্ণ এবং চারিগ্রাম ও জামির্ত্তা ইউনিয়নের আংশিক, পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলার আংশিক লোকজনসহ প্রায় দু’লক্ষাধিক লোক উপজেলা সদর হয়ে ঢাকা যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে । বিপাকে পড়েছেন ওই রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহন চালকরাও।
জানা গেছে, রাস্তাাটির মানকিনগর থেকে পাড়াগ্রাম পর্যন্ত মেরামত কাজ করা হলেও সংস্কার থেকে বাদ পড়ে উপজেলা সদর থেকে মানিকনগর পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ অংশ যা যানবাহন এবং লোকজন চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপোযোগী। উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা যায়, ১২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯ কিলোমিটার সড়কটি উন্নয়ন ও প্রস্তস্থ প্রকল্পের টেন্ডার হয় ২০২০ সালের শুরুতে। ঢাকাস্থ দিলকুশার মোঃ নাসির উদ্দিনের মালিকানাধীন ডলি কনস্ট্রাকশন টেন্ডারে কাজ পান। টেন্ডার অনুযায়ী ওই বছরে ২৫ মার্চ সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই কাজ শেষ হওয়ার কথা। ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান ভেকু দিয়ে সড়কটি ভেঙ্গে সংস্কার কাজ শুরু করেন। কাজ শুরুর কয়েক দিন পরেও বন্ধ হয়ে যায়। দেড় বছর পার হয়ে গেলেও এখানো পর্যন্ত রাস্তা প্রস্তস্থকরণের কাজ বন্ধ রয়েছে।
সরজমিনে দেখা গেছে, এ সময়ের মধ্যেই রাস্তা বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে সম্পূর্ণ মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। ফলে প্রায় প্রতিদিন ঘটছে দূর্ঘটনা। ঘটছে সম্পদসহ প্রাণহানি। অপর দিকে, চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই রাস্তা ব্যবহারকারী প্রায় দু‘লক্ষাধিক মানুষ। বর্তমানে মালবাহী ট্রাক ছাড়া অন্যান্য যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বিপদে পড়েছে অসুস্থ রোগী বিশেষ করে গর্ভবর্তী নারীরা। অন্যান্য মানুষের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। স্থানীয় বাসিন্দা সিংগাইর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষক মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের অসুবিধার বিষয় বিবেচনা করে অল্প সময়ের মধ্যে সড়কটির মেরামতের জোর দাবি জানাই। এলাকার কৃষক হোসেন আলী বলেন, এ রাস্তার কারণে আমাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য সাহরাইল ও সিংগাইর বাজার এবং ঢাকায় বিক্রির জন্য নিতে অনেক কষ্ট হয় এবং পরিবহন খরচও বেশি পড়ে যায়। এজন্য আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হচ্ছি।
এ বিষয়ে সিংগাইর-মানিকনগর সড়কে যাতায়াতকারী নীলটেক গ্রামের ব্যবসায়ী মোঃ আওলাদ হোসেন বলেন, আমাদের দূর্ভোগ লাগবে উপজেলার দক্ষিণাংশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর উপজেলা সদর এবং ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি খুব দ্রুত সংস্কার কাজ শেষ করা জরুরী। সিএনজি চালক মো.আনোয়ার (২৮) বলেন, রাস্তাটি খানাখন্দের কারণে উচুঁ-নিচু হওয়ায় ৬ মাসেই আমার নতুন গাড়ী পুরাতন হয়ে গেছে। যন্ত্রপাতিও নষ্ট হয়ে গেছে। একাধিক গাড়ির চাকা ভেঙে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে এবং সিএনজি উল্টে গিয়ে কয়েকটি মারাত্নক দূর্ঘটনা ঘটেছে। সড়কটি যে টাকা আয় হয় তা যানবাহনের পেছনে খরচ হয় বলে একাধিক চালক জানান।
এ দিকে, আবহাওয়া একটু শুস্ক হলেই ধূলো-বালির কারণে মানুষের দৈনন্দিন জীবন যাপন দূর্বিষহ হয়ে ওঠে। লক্ষীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, মোটরসাইকেল নিয়ে সড়কটির ৪ কিলোমিটার যেতেই শরীর ও পোশাকে ধূলার আবরণ পড়ে। শ্যামনগর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস বলেন, সড়কের ধুলা রান্না করা ভাত তরকারীর সাথেও মিশছে। ঢেকে রেখেও ধূলা থেকে রেহাই পাচ্ছি না। ঔষধ কোম্পানির একমি’র সিংগাইরের বিক্রয় প্রতিনিধি টুটন দাস বলেন, চাকরির প্রয়োজনে বিধ্বস্ত এ রাস্তাটি দিয়ে চলাচল করতে হয়। এতে শরীরের উপরে যেমন ধুলার আবরণ পড়ছে তেমনি শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে ভিতরে ধুলা জমা হচ্ছে। মাঝে মধ্যে অসুস্থ্য বোধ করি।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ডলি কনস্ট্রাকশন সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় সাইট অফিসও বন্ধ রয়েছে।
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মদ রুবাইয়াত জামান জানান, আমরা কাজ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মামলা করলে কোর্ট স্থগিত আদেশ দিয়েছে।